Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

এক নজরে

প্রাণিসম্পদ (Livestock)  অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে বিশেষ করে খামারে গবাদি প্রাণি ও হাঁস-মুরগি প্রতিপালন। বাংলাদেশে গবাদি প্রাণির মধ্যে উল্লেখযোগ্য গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া। এগুলো যেকোন দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, কারণ এসব প্রাণি কৃষি কার্যক্রমসহ বিভিন্ন কাজে চালিকা শক্তি (draft), চামড়া, ও সারের যোগান দেয় এবং জনসংখ্যার বৃহৎ অংশের জন্য মাংস ও দুধের প্রধান উৎস। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পালিত প্রাণিসম্পদের ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাণিসম্পদের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে জড়িত রয়েছে গবাদি প্রাণির স্বাস্থ্য ও কল্যাণ, উৎপাদন উপাত্তগুলির মান এবং সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যবসা-উদ্যোগ প্রসারের কার্যকর ব্যবস্থা। পরিসংখ্যান অনুসারে মোট জাতীয় উৎপাদের (জিডিপি’র) প্রায় ২.৯% যোগায় প্রাণিসম্পদ খাত এবং এটির বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৫.৫%। বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ২০% গবাদি প্রাণি ও হাঁস-মুরগি পালন ও প্রজনন কর্মসূচির আওতায় জীবিকা নির্বাহ করে। জমিচাষ, ভারবহন এবং গোবরের সার ও জ্বালানি সরবরাহ প্রাণিসম্পদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তদুপরি, প্রাণির চামড়া, হাড়, নাড়িভুঁড়ি ও পালক ইত্যাদি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সহায়ক। প্রাণিসম্পদ ভূমিহীন মানুষের জীবিকার একটা বড় অবলম্বন।

বর্তমানে এ দেশে ২৫.৭ মিলিয়ন গরু, ০.৮৩ মিলিয়ন মহিষ, ১৪.৮ মিলিয়ন ছাগল, ১.৯ মিলিয়ন ভেড়া, ১১৮.৭ মিলিয়ন মুরগি এবং ৩৪.১ মিলিয়ন হাঁস রয়েছে । প্রতি একর আবাদযোগ্য জমিতে প্রাণি-পাখির ঘনত্ব ৭.৩৭। বছরের পর বছর এদেশে প্রাণি-পাখির ঘনত্ব বেড়েছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় হেক্টর প্রতি প্রাণি-পাখির ঘনত্ব বাংলাদেশে বেশি। কিন্তু এসব প্রাণি-পাখির তুলনায় উৎপাদনশীলতা খুবই কম বিধায় প্রয়োজনের তুলনায় প্রাণি-পাখি উপজাতের জনপ্রতি প্রাপ্যতা খুবই কম। দেশে বর্তমানে দুধ, মাংস ও ডিমের ঘাটতি যথাক্রমে শতকরা ৮৫.৯, ৮৮.১ এবং ৭০.৭ ভাগ। অতি সম্প্রতি এসব উপজাতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হারে বেশ উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগামী ২০২১ সাল নাগাদ জাতীয় উৎপাদন থেকে দেশের চাহিদা মেটাতে হলে এসব উপজাতের উৎপাদন ন্যুনপক্ষে বছরে গড়ে শতকরা ৬ থেকে ৯ ভাগ হারে বাড়িয়ে যেতে হবে। সে জন্যে প্রাণি-পাখি উপখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। প্রাণি-পাখির গবেষণা ও সম্প্রসারণ খাতে প্রতি ১ টাকা বিনিয়োগ করা হলে বছরে গড়ে আয় হবে পণ্যভেদে ১.৪২ থেকে ৩.১৫ টাকা।

বাংলাদেশের শতকরা ৮৩.৯ ভাগ পরিবার প্রাণি-পাখি প্রতিপালন করছে। তবে শুধু গরু-মহিষ প্রতিপালন করছে শতকরা ৪৫.৯ ভাগ পরিবার। এ ছাড়া ছাগল-ভেড়া প্রতিপালন করছে শতকরা ৩১.৪ ভাগ এবং হাঁস-মুরগি শতকরা ৭৬.৩ ভাগ পরিবার। প্রতিটি পরিবারে গড়ে ১.৫ টি গরু-মহিষ, ০.৯টি ছাগল-ভেড়া ও ৬.৮ টি হাঁস-মুরগি রয়েছে।

এখানে লক্ষণীয় বিয়ষ এই যে পরিবার প্রতি প্রাণি-পাখি সম্পদের বণ্টনে অসমতা খুবই কম। ১৯৯২ সালে দেশের ৬২টি গ্রামে পরিচালিত জরিপ থেকে গিনী কোয়েফিশিয়েন্ট-এর পরিমাপে কৃষি জমি বণ্টনের পুঞ্জিভবন যেখানে ০.৬৩ পাওয়া গেছে, সেখানে প্রাণিসম্পদ বণ্টনের অসমতা পাওয়া গেছে মাত্র ০.৩০। এর পর এরূপ অসমতার হার বেড়েছে। ১৯৯৬ সালের কৃষি সুমারী অনুযায়ী দেশে জমি বণ্টনের অসমতা যথাক্রমে ০.৩৭ এবং ০.১৭ লক্ষ্য করা গেছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে প্রাণি-পাখি উপখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে আয় বণ্টনের অসমতায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন নানা উপাত্তনির্ভর। এগুলি হলো গবাদি প্রাণি স্বাস্থ্য সেবা, প্রাণি-সহায়ক কার্যক্রম, প্রাণি-সন্বন্ধীয় জীববস্ত্তর বিলিব্যবস্থা, মানসম্পন্ন উৎপাদনের বিস্তরণ, প্রাণিসম্প্রসারণ সেবা এবং সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে অধিকতর সহযোগিতা। প্রাণির বিবিধ স্বাস্থ্যসমস্যা, যেমন রোগ শনাক্তকরণ, চিকিৎসা, রোগ নিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ মোকাবিলা ইত্যাদি প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত কয়েকটি প্রধান দিক। এগুলি ছাড়াও আরও কিছু অপরিহার্য দিকও রয়েছে, যেমন জাত উন্নয়নের মাধ্যমে প্রাণির শ্রীবৃদ্ধি, কৃত্রিম গর্ভাধান, প্রযুক্তি হস্তান্তর ইত্যাদি। সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত খাতসহ বাংলাদেশে নানা সংস্থা প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কার্যক্রমে শরিক হতে পারে। বাংলাদেশের গরুর দেশী জাতগুলি উচ্চফলনশীল নয়। ভারত বিভাগের আগে লর্ড লিনলিথগো দেশী গরু উন্নয়নের জন্য বাংলা প্রদেশে কয়েকটি হরিয়ানা গরু আমদানি করেন। ১৯৪৭ সালের পরবর্তীকালে সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে সিন্ধি, শাহীয়াল, থারপার্কার ইত্যাদি কয়েক জাতের গরু আনা হয়। স্থানীয় জাতগুলি উন্নয়নের জন্য ১৯৫৮ সালে শুরু হয় কৃত্রিম গর্ভাধান। ১৯৬৯-১৯৮২ সাল পর্যন্ত জার্মান বিশেষজ্ঞরা সাভার গবাদি প্রাণির খামারে হালচাষ/ভারবাহী ষাঁড় ও দুধেল গাইয়ের উপযুক্ত জাত উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন। ১৯৭৪ সালে অস্ট্রেলীয় সরকার বাংলাদেশকে হোলস্টেন ফ্রিসিয়ান জাতের কিছু প্রজনক ষাঁড় ও দুধেল গাই উপহার দেয়। তদুপরি দেশী গরু উন্নয়নের জন্য Bos taurus প্রজাতির ষাঁড়ের হিমায়িত শুত্রুও আনা হয়েছিল জার্মানি, আমেরিকা, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান থেকে। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এজেন্সির (JICA) সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দুই দেশের বিজ্ঞানীরা সাফল্যের সঙ্গে ভ্রূণ সংস্থাপন করেন।

বাংলাদেশে লভ্য প্রাণির জাতগুলি নিম্নরূপ: গরু: ১. দেশী গরুর জাত– দেশী জাতের লাল চট্টগ্রাম, গয়াল, পাবনা গরু; ২. বিদেশী– হরিয়ানা, সিন্ধি, শাহীয়াল, জের্সি ও হোলস্টেন ফ্রিসিয়ান; ৩. সংকর– Bos indicus  Bos taurus; মহিষ: ১. নদী জাতের; ২. বাদা জাতের; ৩. নদী  বাদা জাতের; ছাগল: ১. ব্লাক বেঙ্গল; ২. যমুনা পাড়ি; ৩. ব্লাক বেঙ্গল  যমুনা পাড়ির সংকর; ভেড়া: শ্রেণীহীন দেশী জাতের; মুরগি: ১. শ্রেণীহীন দেশী জাতের– আসিল, চাটগেঁয়ে, উদলা গলা; ২. বিদেশী– সাদা লেগহর্ন, রোড আইল্যান্ড রেড, ফাওমি, অস্ট্রালোপ, কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্রয়লার ও ডিম পাড়া জাত; ৩. সংকর– স্থানীয়  বিদেশী; হাঁস: ১. দেশী জাতের– সিলেটী মাটিহাঁস, নাগেশ্বরী, মস্কভি, রাজহাঁস; ২. বিদেশী খাকি ক্যাম্বেল, ভারতীয় রানার, জিনডিং, চেরি ভ্যালি; ৩. সংকর– দেশী  বিদেশী। শূকর: দেশী জাত।

ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগল উন্নয়নের জন্য দেশে সরকারি উদ্যোগে অনেকগুলি খামার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উন্নত জাতের পাঁঠা গ্রামের নির্বাচিত কৃষকদের মধ্যে এবং উন্নত জাতের ছাগী আয় উপার্জনের জন্য ভূমিহীন দরিদ্র কিষানীদের মধ্যে বিলি করা হয়। সরকারি খাতের পাশাপাশি দেশে ব্যক্তিগত খাতেও ব্যবসায় উদ্যোক্তা আছেন যারা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিভিন্ন খামার পরিচালনা করেন।

দেশী জাতের হাঁস-মুরগি আকারে ছোট, ডিম পাড়ে কম। সরকার দেশের অনেক জায়গায় বহু মুরগি ও হাঁসের খামার প্রতিষ্ঠা করেছে। আশির দশকের মাঝামাঝি ইউনিসেফ প্রদত্ত আর্থিক সহায়তায় গ্রামের অনেক বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নেদারল্যান্ড সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশে কয়েকটি হাঁস-মুরগি পালন ইউনিট স্থাপিত হয়েছে। দুটি সংকর জাতের মোরগ- ‘রূপালী’ (সাদা লেগহর্ন মুরগা  ফাওমি মুরগি) ও ‘সোনালী’ (আর আই আর মুরগা  ফাওমি মুরগি) বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবেশে সুঅভিযোজিত হয়ে আছে।

বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হাঁস-মুরগির অনেকগুলি জাতই বাংলাদেশে এখন সুপ্রতিষ্ঠিত এবং বিভিন্ন খামারে লাভজনকভাবে ব্যবহূত হচ্ছে। সরকার ও হাঁস-মুরগি ব্যবসায়ীদের গৃহীত সম্প্রসারণ উদ্যোগের ফলে দেশে এই জাতীয় খামার ক্রমাগত বাড়ছে। সরকারি ও বেসরকারি খামার ছাড়াও সামরিক বিভাগের এই জাতীয় কিছু খামার রয়েছে যা সেনাবাহিনীর আংশিক চাহিদা মিটায়।

দেশের কয়েকটি এলাকায় অধিবাসীরা ভারবাহী হিসেবে ঘোড়া পোষে। দেশে কত ঘোড়া আছে তা আজও হিসাব করা হয় নি।

দুধ, মাংস ও ডিমের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ এবং গ্রামের দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান ও আয়বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি প্রাণিসম্পদ উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এই কর্মকান্ডের প্রায়োগিক দিকগুলির কার্যকর সংগঠনের জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের অন্যান্য প্রাণিবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের মতো নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় দক্ষ কর্মীদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। ঢাকার সাভারে অবস্থিত বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নের জন্য গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে।

বর্ধিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার সংকর দুধেল গাই পালনে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে থাকে। টিকা এবং কৃত্রিম গর্ভাধানেও সরকার যথেষ্ট সহযোগিতা করে।

বাংলাদেশে প্রাণি-পাখির ঘনত্ব বেশি, কিন্তু এদের উৎপাদনশীলতা কম। সে কারণে এ দেশে প্রাণি-পাখিজাত পণ্য সামগ্রীর বিরাট ঘাটতি রয়ে গেছে। এ ঘাটতির পেছনে রয়েছে প্রাণি-পাখির অনুন্নত জাত, খাদ্য সমস্যা, রোগ ও ব্যবস্থাপনা সমস্যা ইত্যাদি। দেশের প্রাণি-পাখি সম্পদের উন্নয়নের জন্যে উল্লেখিত সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে। এ ছাড়া প্রাণি-পাখিজাত পণ্যের বাজারজাতকরণের অসুবিধাসমূহ দূর করতে হবে এবং প্রাণি-পাখির খামার পরিচালনার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতে হবে। এ সকল লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যে ইতিপূর্বে বিস্তারিতভাবে অনেক বাস্তবমুখী সুপারিশ প্রণয়ন করা হয়েছে। এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে কিছু সুপারিশ পেশ করা হলো:

১. প্রাণি-পাখির জাত উন্নয়নে কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম জোরদারকরণ এবং দেশী উন্নত জাতগুলো সংরক্ষণ।

২. উন্নত ঘাস চাষ সম্প্রসারণ ও প্রাণি-পাখির খাদ্য প্রস্ত্ততকারী কারখানা স্থাপনে উৎসাহ প্রদান।

৩. প্রাণি-পাখির টিকা উৎপাদন, প্রদান ও চিকিৎসা ব্যবস্থার সম্প্রসারণ।

৪. উন্নত খামার ব্যবস্থাপনায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান।

৫. নতুন খামার স্থাপনে বেসরকারি খাতকে উৎসাহ প্রদান এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহের নিশ্চয়তা বিধান।

৬. প্রাণি খাদ্য ও প্রাণি চিকিৎসা সামগ্রীর মূল্য কৃষকদের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখার জন্য ভর্তুকি প্রদান।

৭. প্রাণি-পাখির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কাজে বেসরকারি সংস্থাসমূহকে সম্পৃক্তকরণ।

৮. প্রাণি-পাখি সংক্রান্ত গবেষণায় অগ্রাধিকার প্রদান।

৯. প্রাণি-পাখিজাত পণ্য সামগ্রীর সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণে বিশেষ সুবিধা প্রদান।

১০. সহজ শর্তে এবং অল্প সুদে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ প্রদানের নিশ্চয়তা বিধান।

১১. প্রাণি-পাখির উন্নয়নে সরকারি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধিকরণ।

১২. ভূমিহীন কৃষক ও গ্রামীণ মহিলাদের জন্যে প্রাণি-পাখি প্রতিপালনের বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ।

বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে অতি কষ্টে জীবন যাপন করছে। এদের কষ্ট লাঘবের জন্যে তথা দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্যে একাধারে প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রিক এবং লক্ষ্য গোষ্ঠী কেন্দ্রিক কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রাণি সম্পদ উন্নয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে এ দু’ধরণের কর্মসূচিরই সফল বাস্তবায়ন সম্ভব।

প্রাণি সম্পদ উপখাতে বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধির হার অনেক বেশি। কিন্তু তাতে আয় বৈষম্য বৃদ্ধির সুাযাগ খুবই কম। অতএব, এ উপখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে আয়, কর্মসংস্থান ও সামাজিক অসমতার উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাতে আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে, সাধারণ মানুষের আয় বেড়ে যাবে, তাদের পুষ্টিহীনতা হ্রাস পাবে এবং আর্থ-সামাজিক বঞ্চনা ও বৈষম্য কমে আসবে। সে কারণে প্রাণি-পাখি সম্পদের উন্নয়নের জন্যে সরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে লক্ষ্য গোষ্ঠী কেন্দ্রিক উন্নয়ন কর্মসূচিকে নিবিড়তর করতে হবে। তাতে দারিদ্র্য বিমোচনের উদ্দেশ্য সফল হবে।

এখানে উল্লেখযোগ্য যে বাংলাদেশের কৃষকগণ প্রাণি-পাখি প্রতিপালন করেই জীবিকা নির্বাহী করে না। তারা মিশ্র খামার পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে। তাদের আয়ের উৎস অনেক। প্রাণি-পাখি এদের মধ্যে একটি মাত্র উৎস। অতএব, প্রাণি-পাখির উন্নয়ন দেশের দারিদ্র্য ও আয় বৈষম্য দূরীকরণে কতটুকু প্রভাব ফেলছে তা নিরূপণে কিছুটা জটিলতা রয়েছে। তবে প্রাণি-পাখি প্রতিপালনের মাধ্যমে ছোট ও ভূমিহীন কৃষকদের মাথাপিছু আয় বাড়ছে কিনা এবং তাতে তাদের দারিদ্রে্যর উপর কোন ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে কিনা তা নির্ণয় করা দূরূহ কিছু নয়। এ বিষয়ে নিয়মিত সমীক্ষা পরিচালনা করা একান্ত প্রয়োজন। [শেখ হেফাজউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম]

প্রাণিজাত সামগ্রী (Livestock products)  বাংলাদেশে ১৯৯৫-৯৬ সালে উৎপাদিত দুধের পরিমাণ ছিল ১৫.৮ লক্ষ মে টন, ১৯৯৬-৯৭ সালে ১৫.০৯ লক্ষ মে টন এবং ১৯৯৭-৯৮ সালে ১৬.২ লক্ষ মে টন। মাংস উৎপাদনের পরিমাণ ১৯৯৫-৯৬ সালে ছিল ৫.৪ লক্ষ মে টন, ১৯৯৬-৯৭ সালে ৫.৮ লক্ষ মে টন এবং ১৯৯৭-৯৮ সালে ৬.২ লক্ষ মে টন। আরেক হিসাবে দেখা যায় ঐ সময়ে অর্থাৎ ১৯৯৫-৯৬ সালে ডিম উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৮৩ কোটি ৯ লক্ষ, ১৯৯৬-৯৭ সালে ৩০২ কোটি এবং ১৯৯৭-৯৮ সালে ৩২৫ কোটি ২০ লক্ষ। ২০০৬-০৭ সালে দেশে দুধ, মাংস ও ডিমের উৎপাদন ছিল যথাক্রমে ২২.৮ মিলিয়ন মে টন, ১.০৪ মিলিয়ন মে টন ও ৫৩৬৯ মিলিয়ন ।

এদেশে গবাদি প্রাণির বৃদ্ধির হার সামান্য, ১৯৬০ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত মাত্র ০.২৫%। কম জন্মহার, রোগবালাই, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রচুর সংখ্যক গবাদি প্রাণি কোরবানি এবং অপরিকল্পিত প্রাণি জবাই গবাদি প্রাণির বৃদ্ধি হার দমিত থাকার প্রধান কারণ।

গরু ও মহিষ লাঙল ও গাড়ি টানায়, রাস্তাঘাটে ও খামারে পরিবহণের কাজে, ধান ও আখ মাড়াই কাজে এবং তৈলবীজ থেকে তেল উৎপাদনে চালিকা শক্তির যোগান দেয়। তবে প্রয়োজনের তুলনায় প্রাণিশক্তির পরিমাণ যথেষ্ট কম। বংশানুগতভাবে নিম্নমানের হওয়ার কারণে বাংলাদেশের গবাদি প্রাণি ও হাঁস-মুরগি থেকে প্রাপ্ত দুধ, মাংস ও ডিমের পরিমাণ চাহিদার তুলনায় অনেক কম। একটি স্থানীয় গাভী বছরে গড়ে প্রায় ২২১ কেজি দুধ দেয়। সে তুলনায় ডেনমার্কের এবং যুক্তরাষ্ট্রের গাভীর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা যথাক্রমে বছরে প্রায় ৪৯২০ কেজি এবং ৫৩৭৭ কেজি।

একটি স্থানীয় গরুর মাংস উৎপাদন ক্ষমতা মাত্র প্রায় ৫০ কেজি। দেশজ মুরগিও ডিম দেয় বছরে মাত্র ৪০-৫০টি। এ দিক থেকে বাংলাদেশের স্থানীয় জাতগুলির উৎপাদনশীলতা অন্য উন্নত দেশের তুলনায় যথেষ্ট কম। বিদেশ থেকে আনা মুরগির জাতগুলি এখন ২৫০টি পর্যন্ত ডিম উৎপাদন করছে। স্থানীয় ছাগলের মাংস উৎপাদন ক্ষমতা ছাগল প্রতি গড়ে প্রায় ১০ কেজি, যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের গড় উৎপাদনের (১১ কেজি) প্রায় কাছাকাছি। নিম্নের সারণিতে বাংলাদেশে দুধ, মাংস ও ডিমের বাৎসরিক উৎপাদন, চাহিদা ও ঘাটতি সংক্রান্ত একটি হিসাব দেখানো হয়েছে।

সারণির উপাত্ত থেকে বোঝা যায়, বর্তমানের চাহিদার তুলনায়, বিশেষ করে দুধ ও মাংসের বাৎসরিক উৎপাদন ও প্রবৃদ্ধির হার যথেষ্ট কম। তবে দেশে বর্তমানে হাঁস-মুরগি খাতের সম্প্রসারণ ঘটায় ডিমের চাহিদা অনেকটাই পূরণ হবে বলে আশা করা যায়।

প্রাণীর ত্বক ও চামড়া মূল্যবান সম্পদ হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে প্রাণিজাত এ সম্পদের উৎপাদন সন্তোষজনক। দেশে মোট লভ্য চামড়ার শতকরা প্রায় ৮১ ভাগ ‘wet blue leather’ হিসেবে এবং চামড়াজাত অন্যান্য সামগ্রী বিদেশে রপ্তানি করা হয়। দেশে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের এবং চামড়ার সামগ্রী তৈরির অনেক প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানা রয়েছে। কয়েক হাজার লোক এসব কারখানায় কর্মরত আছে। চামড়াজাত ব্যবহার্য পণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জুতা, সুটকেস, ব্যাগ, তাবু ইত্যাদি।

গোবর প্রাকৃতিক সার ও জ্বালানির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। বছরে প্রায় ৮ কোটি মে টন গোবর পাওয়া যায়। গোবর বায়োগ্যাস তৈরিতেও এখন ব্যবহূত হচ্ছে। এছাড়া গবাদি প্রাণির হাড়, শিঙ, খুর ইত্যাদি দ্রব্যও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। চূর্ণ ও আংশিক চূর্ণ হাড় ইত্যাদি রপ্তানি করে দেশ প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকে।

প্রাণি-পাখিজাত সামগ্রীর প্রবৃদ্ধির সঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বাজার ব্যবস্থাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। বাংলাদেশে এ দুটো বিষয়েই  প্রবৃদ্ধির হার ইতিবাচক। বর্তমানে প্রথমোক্ত বিষয়ে প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানো এবং শেষোক্ত বিষয়ে প্রবৃদ্ধি হ্রাসের জন্য হস্তক্ষেপ চলছে। তাতে ভবিষ্যতে কোন এক সময় প্রাণি-পাখিজাত সামগ্রীর সরবরাহ অনেক বৃদ্ধি পেয়ে পণ্যমূল্য উৎপাদকের স্বার্থের প্রতিকূলে চলে যেতে পারে। তখন বিপণন ব্যবস্থায় হস্থক্ষেপ ও মূল্য সমর্থন প্রয়োজন হবে। তবে এখনও যেহেতু প্রাণি-পাখিজাত সামগ্রীর চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতি অনেক বেশি এবং যেহেতু জনপ্রতি আয় ক্রমেই বাড়ছে সেহেতু অদূর ভবিষ্যতে আভ্যন্তরীণ বাজারে প্রাণি-পাখিজাত সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্য পতনের সম্ভাবনা খুবই কম। এ নাগাদ সামগ্রীক মূল্য পরিস্থিতি উৎপাদন বৃদ্ধির অনুকূলে রয়েছে। 

গবাদি প্রাণির ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ পরজীবী (Livestock pests and parasites)   পালিত প্রাণির ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ও পরজীবীদের মধ্যে আছে আর্থ্রোপোড, কৃমি ও প্রোটোজোয়া, যারা গবাদি প্রাণিকে খাদ্য ও বংশবৃদ্ধির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে। বাংলাদেশের নিরক্ষীয় জলবায়ু ও অনুন্নত পশুসেবার দরুন এখানে নানা ধরনের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ও পরজীবীর অবাধ বিস্তারের অনুকূল বাস্ত্তসংস্থানিক পরিবেশ রয়েছে। বাছাইকৃত এই জাতীয় শতাধিক প্রজাতির মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটিই শুধু সংক্ষেপে বর্ণিত হলো।

চিহ্নিত ও গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিপদী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে এঁটেল, মাইট, উকুন ও কিছু মাছি। এঁটেলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য Boophilus microplus, Haemaphysalis bispinosa, Rhipicephalus sanguineus, এবং Hyalomma anatolicum। প্রায় সব জাতের রোমন্থকই এসব এঁটেল দ্বারা সারা বছর কিছুটা আক্রান্ত থাকে। প্রায়শ অল্পবয়সীরা এবং বিদেশী ও সংকর প্রাণীগুলিই অত্যধিক মাত্রায় আক্রান্ত হয়। সব জাতের এঁটেলই ব্যাপকভাবে বিস্তৃত, তবে H. anatolicum প্রজাতিটি দেশের উত্তর-পশ্চিমের শুষ্ক অঞ্চলে (রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলায়) সীমাবদ্ধ। বেশির ভাগ গবাদি পশুই নিম্নোক্ত এক বা একাধিক জাতের উকুন দ্বারা আক্রান্ত হয়: Haematopinus tuberculatus, H. eurysternus, Linognathus vituli, L. steropsis, Damalinia bovis এবং D. ovis। শীতকালেই উকুনের অধিক প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ঘোড়া ও গাধায় সহজদৃষ্ট D. equi রাজশাহী, টাঙ্গাইল ও ঢাকা জেলায় ব্যাপক।

সাধারণত গ্রীষ্মকালে গরু, ভেড়া ও ছাগলের অন্ডকোষ, কান ও পায়ের যে ক্ষত দেখা দেয় তাতে সম্পৃক্ত Callitroga americana এবং Chrysomyia bezziana মাছিরা। Oestrus ovis মাছিঘটিত নাকের ক্ষত ছাগলের মধ্যে অত্যধিক (২৫%)। সহজদৃষ্ট মাইটের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভেড়া, ছাগল ও গরুর পরজীবী Sarcoptes scabieiPsoroptes ovis; এদের আক্রমণ মাঝারি (প্রায় ১০%), সাধারণত শীতকালেই এদের প্রাদুর্ভাব ঘটে এবং সারা দেশে দেখা যায়।

ক্ষুদ্রান্ত্রবাসী Neoascaris vitulorum ঘটিত কৃমিরোগ বাংলাদেশে গরুর বাচ্ছা পালনের একটি বড় অন্তরায়। প্রায় ৭০% বাছুর এই কৃমিতে আক্রান্ত হয়। Parascaris equorum কৃমি ঘোড়ার ক্ষুদ্রান্ত্রে পাওয়া গেছে, তবে আক্রমণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নেই। ভেড়া ও ছাগলের চতুর্থ উদরের বাসিন্দা Haemonchus contortus কৃমির আক্রমণ সাধারণত কমবয়সীদের মধ্যেই অত্যধিক (৮৫%)। গরুর বাছুরে H. contortus ও H. simulis কৃমিদের আক্রমণ ২০-২৪%। বাছুরের উদরবাসী Mecistocirrus digitatus আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কৃমি, আক্রান্তের হার ৪৪%। অন্ত্রবাসী এইসব কৃমি রক্তচোষকও, এদের অস্তিত্ব সারা বাংলাদেশে।

Trichostrongylus axei, T. colubriformis, Cooperia pectinata, C. punctata, Oesophagostomum radiatum, O. columbianum, Bunostomum bovis, B. phlebotomum, Gaigeria pachyscelis সাধারণ পৌষ্ঠিকনালির গুঁড়াকৃমি; এরা বাংলাদেশের রোমন্থক প্রাণীদের আক্রমণ করে। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে কিছুটা সীমিত G. pachyscelis ছাড়া বাকি সবগুলিই দেশের সর্বত্র বিদ্যমান।

ঘোড়া ও গাধার সচরাচরদৃষ্ট গুঁড়াকৃমি হলো Habronema megastoma, T. axei, Strongylus vulgaris এবং Oxyuris equi। কুঁজক্ষতের (humpsore) পরজীবী Stephanofilaria assamensis দ্বারা আমাদের গরুর প্রায় ১৫% (প্রধানত ষাঁড়) আক্রান্ত হয়। দেশের সর্বত্র বিস্তৃত এই রোগটি সাধারণত গ্রীষ্মকালেই দেখা যায় আর সেটা মাছির (Musca conducens) প্রজনন মরসুমও। Onchocerca gibsoni, ও O. armillata এই দুটি ফাইলেরিয়ার গুঁড়াকৃমিও প্রধানত প্রাপ্তবয়স্ক ষাঁড়দেরই আক্রমণ করে। গরুর শ্বাসনালীর বাসিন্দা Dictyocaulus viviparous কৃমির আক্রমণ মাঝেমধ্যে ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা ও হবিগঞ্জ জেলায় ঘটে। বাছুরের মধ্যে সহজদৃষ্ট Strongyloides papillosus কৃমি সারা দেশেই আছে।

ট্রেমাটোড Fasciola gigantica বাংলাদেশের ৬০% রোমন্থক প্রাণীকে আক্রমণ করে। কৃমিটি সারা দেশে থাকলেও সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য-চট্টগাম, ঢাকা, নেত্রকোণা, বরিশাল, খুলনা ও ফরিদপুর জেলায় এর প্রাদুর্ভাব অপেক্ষাকৃত অধিক। এই কৃমির মাধ্যমিক পোষক একটি শামুক- Lymnaea auricularia। অন্ত্রের শিরার বাসিন্দা Schistosoma spindalisS. indicum ঘটিত গরুর অন্ত্রীয় সিস্টোসোমিয়াসিস (schistosomiasis) রোগটি সারা দেশেই আছে। তিন বছরের বেশি বয়সী গরুতেই আক্রমণ অধিক (প্রায় ২৫%) এবং পূর্ণবয়স্ক ভেড়া ও ছাগলে কিছুটা কম (১২%)। S. nasalis ঘটিত নাকের (সিস্টোসোমিয়াসিস) সারা দেশে গরু ও মহিষে বহুব্যাপ্ত। এই রোগের আক্রমণ ব্যাপক (৬০%) এবং দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সহজদৃষ্ট।

হাইডাটিড সিস্ট প্রায় ১৩% গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার যকৃতে দেখা গেছে। গরুর মধ্যে এগুলির ৫৮% বন্ধ্যা, কিন্তু ভেড়া ও ছাগলে সবগুলিই প্রজননক্ষম। এসব সিস্ট যা Echinococcus granulosus ফিতাকৃমির লার্ভা, গোটা দেশে কুকুর, বিড়াল ও শিয়ালের ক্ষুদ্রান্ত্রে সর্বদাই থাকে। Coenurus cerebralis ঘটিত ‘Gid’ রোগ প্রায়ই ছাগলের মস্তিষ্কে দেখা দেয় এবং দেশের ২-৩% ছাগল এতে আক্রান্ত হয়। পূর্ণবয়স্ক ফিতাকৃমি Taenia multiceps কুকুরে বেশি দেখা যায়। ভেড়ার বাচ্চা ও গরুর বাছুরের মধ্যে সহজদৃষ্ট Moniezia expansaM. benedeni প্রজাতির কৃমিতে ওই বয়সী ভেড়া ও বাছুরের প্রায় ২০% আক্রান্ত হয় এবং রোগটি সারা দেশেই আছে। Anoplocephala magnaA. perfaliata সাধারণ ফিতাকৃমি, দেখা যায় বাংলাদেশের ঘোড়া ও গাধার ক্ষুদ্রান্ত্রে।

প্রোটোজোয়াঘটিত রোগের মধ্যে ১-২ বছর বয়সী বাছুরের কক্সিডিওসিস সর্বাধিক। Eimeria zurnii বা E. bovis জনিত এই রোগে ৫-১০% বাছুর আক্রান্ত হয়। E. intricata, E. parva, E. faurei, E. ninakohlyakimovae প্রোটোজোয়া প্রজাতিগুলির সংক্রমণে ভেড়া ও ছাগলের মধ্যেও কক্সিডিওসিস দেখা দেয়, কিন্তু তেমন কোন ক্ষতি ঘটে না। রক্তের প্রোটোজোয়া Bebesia bigemina এবং B. bovis কখনও কখনও বাছুরদের মধ্যে চোখে পড়ে (০.০৩%), B. equi পাওয়া যায় ঘোড়া ও গাধার রক্তে। সম্প্রতি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে, প্রধানত বিদেশী সংকর গরুর মধ্যে Theileria একটি প্রজাতি ধরা পড়েছে। দেশের উত্তর-পূর্ব জেলাগুলিতে ঘোড়া, গাধা ও গরুর মধ্যে মাঝে মাঝে Trypanosoma evansi দেখা যায়। রক্তবাহী প্রোটোজোয়া Stomoxys calcitransTabanus প্রজাতির রক্তচোষক মাছির উপস্থিতি ও সংখ্যার সঙ্গে জড়িত।  [মোঃ হাফেজুর রহমান]

গবাদি প্রাণির স্বাস্থ্য (Livestock health)  ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, মাইকোপ্লাজমা (mycoplasma), বা পরজীবী প্রাণীর সংক্রমণ অথবা বিপাক ক্রিয়ায় ভারসাম্যের কারণে একটি প্রাণির স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তদুপরি, আপাতদৃষ্টিতে স্বাস্থ্যবান একটি প্রাণির ভালো প্রজনন স্বাস্থ্য থাকবে এমনও কোন নিশ্চয়তা নেই। গর্ভধারণে ব্যর্থতা, প্রজননক্ষমতা লোপ, ভ্রূণাবস্থায় মৃত্যু ও গর্ভপাত এবং স্ত্রী প্রাণির অন্যান্য রোগের সঙ্গে প্রায়শ দুর্বল প্রজনন কর্মকান্ড সম্পর্কিত থাকে। ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস-সৃষ্ট ব্যাধি স্বাভাবিকভাবে একটি প্রাণির মৃত্যুর কারণ হয়, অথচ পরজীবী প্রাণীরা প্রধানত প্রাণির উৎপাদন হ্রাস করে, যদিও পরজীবী কর্তৃক গবাদি প্রাণি মৃত্যুর অনেক উদাহরণ রয়েছে। ব্যাকটেরিয়া-সৃষ্ট বড় ব্যাধির মধ্যে রক্তদূষণ একটি, অথচ ভাইরাস সৃষ্ট ব্যাধির মধ্যে রয়েছে peste des petits ruminants (ppr), পা ও মুখের রোগ (foot and mouth disease) ও ক্ষণস্থায়ী জ্বর। এটি বলা যায় যে, বাংলাদেশে গবাদি প্রাণি উৎপাদন হ্রাসে পরজীবী প্রাণীরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবাদি প্রাণির উল্লেখ করার মতো পরজীবী-সৃষ্ট রোগগুলির মধ্যে রয়েছে ফ্যাসসিওলিয়্যাসিস (fascioliasis), প্যার‌্যাম্ফিস্টোমিয়্যাসিস (paramphistomiasis), সিস্টোসোমিয়্যাসিস (schistosomiasis), হাইড্যাটিডসিস (hydatidosis), অ্যাসক্যারিয়্যাসিস (ascariasis), স্টেফ্যানোফাইল্যারিয়্যাসিস (stephanofilariasis), হিমোনকোসিস (haemonchosis), ইসোফ্যাগোস্টোমিয়্যাসিস (oesophagostomiasis) ও বেবিসিওসিস (babesiosis)। উপরন্তু, রোগ সংক্রমণ এজেন্ট হিসেবে ভূমিকা পালন করার কারণে মাছি, মাইট, এঁটেলসহ বেশ কিছু সংখ্যক সন্ধিপদী প্রাণী অর্থনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। গবাদি প্রাণির সাধারণ স্বাস্থ্যের ক্ষতিসাধনের মাধ্যমে এই সম্পদের উৎপাদন হ্রাসেও এরা ভূমিকা রাখে।  [মোঃ জহুরুল করিম]

প্রাণিসম্পদ শিক্ষা প্রশিক্ষণ (Livestock education and training) এ উপমহাদেশে প্রায় ২০০০ বছর আগে, অশোকের রাজত্বকালে এক ধরনের প্রাণিচিকিৎসার প্রচলন ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে উনিশ শতকের শেষ পঁচিশ বছরে পোষা প্রাণীর চিকিৎসার একটি পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃতি অর্জনের মধ্য দিয়ে প্রাণিচিকিৎসার যথার্থ প্রচলন ঘটে। প্রাণিচিকিৎসাবিদ্যা প্রচলনের সঙ্গে সঙ্গে ১৯৪৭ সালে কুমিল্লায় প্রাণিচিকিৎসা কলেজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে) প্রাণিসম্পদবিদ্যার সূচনা ঘটে। এ কলেজ ১০ বছরের বিদ্যালয় পাঠক্রম (ম্যাট্রিকুলেশন) উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের প্রাণিচিকিৎসা বিজ্ঞানে ৩ বছরের ডিভিএমএস (DVMS/Diploma in Veterinary Medicine and Surgery) কোর্সে অধ্যায়নের সুযোগ প্রদান শুরু করে। ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ হিসেবে ঢাকায় স্থানান্তরের পর এতে প্রাণিপালনের ওপর ৫ বছর মেয়াদি বি.এসসি (AH) ডিগ্রি কোর্স চালু করা হয়। ১৯৫৭ সালে কলেজটি ময়মনসিংহে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৬১ সালে ময়মনসিংহে নবপ্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিসম্পদবিদ্যা স্থানান্তরের পর এ ডিগ্রির নতুন নামকরণ হয় বি.এসসি (Vet Sci & AH)। উৎপাদন ও চিকিৎসা উভয় কার্যক্রম ফলপ্রসূভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে নির্ভরযোগ্য প্রাণিচিকিৎসক শ্রেণী গড়ে তোলাই ছিল এ সমন্বিত কোর্সের লক্ষ্য।

১৯৬৩ সালে বি.এসসি (Vet. Sci & AH) ডিগ্রিকে ভেঙে দুটি ডিগ্রি ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (DVM) এবং বি.এসসি AH (Hons) প্রবর্তনের নীতি গ্রহণ করা হয়। উভয় ডিগ্রি পাঠক্রম উচ্চ মাধ্যামিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচ.এসসি) সম্পন্ন করার পর ৪ বছর মেয়াদি। এইচ.এসসি পর্যায়ে আবশ্যক বিষয় হিসেবে জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিতসহ সমন্বিত বিজ্ঞান কোর্সকে প্রাকপেশাগত পাঠক্রম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রাণিচিকিৎসা পাঠক্রম DVM বিভিন্ন শাখাভিত্তিক বিষয় যেমন শারীরস্থান, শারীরবৃত্ত, অণুজীববিদ্যা, পরজীবীবিদ্যা, রোগতত্ত্ব, পোল্ট্রিবিজ্ঞান, ডেইরিবিজ্ঞান, পুষ্টিবিজ্ঞান, চিকিৎসাশাস্ত্র ও শল্যবিদ্যার সমন্বয়ে গঠিত।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন ডিগ্রি অর্জনের জন্য পঠিতব্য ১৮টি বিষয় সাধারণভাবে পেশাগত (প্রাণিস্বাস্থ্য ও উৎপাদন) বিষয় এবং মৌলিক সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়- এই দুই শ্রেণীতে বিভক্ত। প্রাণিস্বাস্থ্য, প্রাণি উৎপাদন এবং মৌলিক সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়সমূহের শতকরা বিন্যাস যথাক্রমে ৭৮.০, ১২.৫০ এবং ৯.৫০। তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক নম্বর বিন্যাস যথাক্রমে ৬০% ও ৪০%।

বি.এসসি AH (Hons) ডিগ্রির জন্য পঠিতব্য ২০টি বিষয়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রাণিবিজ্ঞান, ডেইরিবিজ্ঞান, পোল্ট্রিবিজ্ঞান, প্রাণিপুষ্টি, প্রাণি উৎপাদন, প্রাণিখাদ্য, বংশগতিবিদ্যা ও প্রজনন, কৃষিতত্ত্ব, অণুজীববিদ্যা, পরজীবীবিদ্যা, প্রাণরসায়ন, পরিসংখ্যান, সমাজবিজ্ঞান প্রভৃতি। তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক ক্লাসের সার্বিক বণ্টন যথাক্রমে ৭০% ও ৩০%।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন এবং বি.এসসি AH (Hons) কোর্সে বর্তমানে বার্ষিক ভর্তি সংখ্যা যথাক্রমে প্রায় ৮০ ও ৭০। এ দুটি কোর্সে ছাত্রী ভর্তি যথাক্রমে প্রায় ৭% ও ২০%। প্রাণি চিকিৎসাবিদ্যা ও প্রাণিপালন অনুষদ দুটির বর্তমান শিক্ষক ও ছাত্র অনুপাত ১ঃ ৫.৪ যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কাছাকাছি।

১৯৯০ সাল থেকে প্রায় এককভাবে প্রাণিরোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকা থেকে কৃষিশিল্প এবং খাদ্যের জন্য প্রাণি উৎপাদন শিল্প, জনস্বাস্থ্য, জীবচিকিৎসা গবেষণা ও সামরিক পেশা পর্যন্ত সকল কার্যক্রমে প্রা©র্ণসম্পদ বিশেষজ্ঞদের কার্যকর ভূমিকায় বেশ কিছু অবস্থান্তর ঘটেছে। এসব পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর (Directorate of Livestock Services/DLS) ও এনজিও ইত্যাদির মতো বিভিন্ন নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে DVM ডিগ্রিধারী স্নাতকদের মাঝারি-রকমের দক্ষ বিবেচনা করে। বাংলদেশ সরকার সমন্বিত ডিগ্রিসহ প্রাণিচিকিৎসক তৈরির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে এবং চারটি ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত চারটি প্রাণিচিকিৎসা কলেজ গড়ে তোলে: সিলেট সরকারি প্রাণিচিকিৎসা কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি প্রাণিচিকিৎসা কলেজ, দিনাজপুর সরকারি প্রাণিচিকিৎসা কলেজ এবং বরিশাল সরকারি প্রাণিচিকিৎসা কলেজ, যেগুলি যথাক্রমে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত। এগুলির পাঠক্রম অভিন্ন এবং চতুর্থ বর্ষশেষে ইন্টার্নি হিসেবে এক বছরসহ পাঁচ বছরের কোর্সের পর ‘ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন’ ডিগ্রি প্রদান করা হয়। বর্তমানে সিলেট ও চট্টগ্রাম সরকারী প্রাণিচিকিৎসা কলেজসমূহ পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়েছে।

প্রশিক্ষণ  প্রাণিসম্পদ খাতে মাঠপর্যায়ে কর্মরত প্রাণিচিকিৎসক, সহায়ক কর্মী ও কৃষকদের কার্যক্রমের লাগসই বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বিভিন্ন এনজিও এবং সংস্থা এসব প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (Officers Training Institute/OTI), প্রাণিচিকিৎসা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (Veterinary Training Institute/VTI) এবং প্রাণিসম্পদ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (Livestock Training Institute/LTI) সহ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর পরিচালনা করে থাকে। এগুলি নিম্নোক্ত ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করে:

কর্মকর্তাদের জন্য মৌলিক প্রশিক্ষণ আবেক্ষাধীন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের জন্য OTI এই সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে। প্রশিক্ষণের বিষয়বস্ত্তর মধ্যে রয়েছে সরকারি নীতিসমূহের পরিচিতি, অভ্যন্তরীণ সম্পদ উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার এবং ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ, জনপ্রশাসন, সরকারি আইনকানুন, কর্মী ব্যবস্থাপনা, অফিস ব্যবস্থাপনা, নীতি প্রণয়ন, প্রকল্প প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি।

দুটি প্রাণিচিকিৎসা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট-এ সহায়ক কর্মী বর্গের নিম্নোক্ত প্রশিক্ষণ কোর্সসমূহ প্রদান করা হয়:

ব্যাপক প্রাণিসম্পদ প্রশিক্ষণ  প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্মিদল যেমন কম্পাউন্ডার, প্রাণিসম্পদ সহকারী, মাঠ সহকারী এবং প্রাণিখাদ্য/কৃত্রিম প্রজননকারীদের জন্য প্রাণিচিকিৎসা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রায় ১২ মাসের প্রশিক্ষণ প্রদান করে। গবেষণা কলাকৌশল, টিকাদান, চিকিৎসা সহযোগিতা, প্রাণিখাদ্য সম্প্রসারণ ও কৃত্রিম প্রজননের মতো বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের কার্যক্রমের জন্য সহায়ক জনবল গড়ে তোলাই এ প্রশিক্ষণের লক্ষ্য।

সহায়ক কর্মিবর্গের জন্য নবায়নী শিক্ষাক্রম  ফসলের উপজাতের ব্যবহার, ইউরিয়ামিশ্রিত খড়, বিদেশী প্রাণিখাদ্যের প্রকারভেদগুলির সম্প্রসারণ প্রভৃতি বিষয়ে সহায়ক কর্মিবর্গের জ্ঞান হালনাগাদ করার জন্য চাকরিকালীন ২-৩ সপ্তাহের সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ।